এম. বোরহান উদ্দিন রতন :
আজ সোমবার দিবাগত রাত পবিত্র শবে-বরাত, পবিত্র কুরআন হাদীসের অসংখ্য বর্ণনা অনুযায়ী মর্যাদাময় রাত। পবিত্র শবে-বরাত যে মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ রাত এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। সকল অতীত ও বর্তমান মুফাসসিরীন এ মুহাদ্দিসীনে কেরাম এ রাতকে এক বাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন। কারণ পবিত্র এ রাতের অস্তিত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব পবিত্র কুরআন হাদীস দ্বারা বহুল প্রমাণিত। শবে-বরাতের রাতে মানুষের বার্ষিক ভাগ্যলিপি লিখা হয় এবং বিগত বছরের আমল নামা আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। এক বৎসরের হায়াত-মউত-রিজিক, দৌলত-তথাভাগ্য নির্ধারণ হয়। এই রাতে আল্লাহরপাক বান্দার দিকে বিশেষ রহমতের নজরে তাকান। এই রাত্রিতে ৭০ হাজার ফিরিস্তা নিয়ে জিবরাঈল দুনিয়াতে আসেন এবং রহমত বন্টন করেন। আরবের বনী কালব গোত্রের ৩০ হাজার বকরীর পশমের সংখ্যারও অধিক গুনাহগারকে ক্ষমা করা হয় এ রাত্রে। এ রাত্রিতে কবিরা গুনাহ ব্যতীত অন্যান্য গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং তওবা করলে কবিরা গুনাহগারকেও ক্ষমা করা হয়।ফলে এ রাতে নফল নামাজ, তিলাওয়াত, যিকির আযকার, দান-খয়রাত, কবর যিয়ারত করা উত্তম। এই রাত্রে আগামী এক বছরের যাবতীয় বিষয়াদি নির্ধারিত হয় এবং শবে ক্বদরের সংশ্লিষ্ট ফিরিস্তার কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই রাত্রে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শাফাআতের পূর্ণ অধিকার প্রদান করা হয়েছে।
ইসলামের ইতিহাসে পবিত্র এ রাতটি বিশ্বের অন্যান্য মুসলমানদের ন্যায় বাংলাদেশের মুসলমানরাও যথাযোগ্য মর্যাদায় রাত ভর এবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে পালন করবে। শবে বরাতের এ পবিত্র রাতে এবদত বন্দেগীর অন্তর্ভুক্ত থাকবে কোরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ, ওয়াজ, জিকির আসকার, কবর জিয়াতর এবং মিলাদ দোয়া ও মোনাজাত।
কিছু ভ্রান্ত মতবাদীরা মিডিয়ায় তাদের বক্তব্য আলোচনা ও লেখনীতে সর্বদা বলে বেড়াচ্ছে যে লাইলাতুল বরাতের বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোন দলিল পবিত্র কুরআন বা হাদীস শরীফে নেই। যা আছে তা মওজু বা জাল।
অথচ কুরআনুল কারীম নির্ভরযোগ্য তাফসীরের ভাষ্য হচ্ছে- তাফসিরে বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইকরামা (রা.) হতে তাফসীরে তাবারী শরীফের ১০ম খ-ের ২২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত মধ্য শাবানের রাতে বছরের জন্য সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। জীবিত ও মৃতদের তালিকাও তৈরী করা হয়। এ তালিকা থেকে একজনও কমবেশী হয় না।
ইবনুল মুনজির (রা) ও ইবনু আবি হাতেম (রা:) তাফসীরে রুহুল মায়ানীতে একই বর্ণনা করেছেন। একইভাবে বিশিষ্ট ৬৫টি তাফসীরে গ্রন্থে শবে-কদর এবং ১৪ শাবানের দিবাগত রাত শবে-বরাতের কথা গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে।
হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী (রহ.) তদ্বীয় কিতাব মুকাশশাফাতুল কুলুব এর ৬৪০ পৃষ্ঠায় ইমাম সুবকীর বরাতে উল্লেখ করেন শবে বরাতের রাতে (এবাদত) সারা বছরের গুনাহ মাফের জন্য বদলা হয়। একইভাবে শবে কদরের রাতের এবদত জিন্দেগীর গুনাহ মাফের বদলা হয়। আর সপ্তাহের গুনাহ মাফের বদলা বা উছিলা হয় প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতের (শুক্রবারের রাত) এবদত বন্দেগী।
হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মধ্য শাবানের রাতে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে জালওয়া রাখেন, অত:পর তাঁর সকল বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক বা শত্রুতা পোষণকারী ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না। এছাড়াও হাদীসটি যে সব গ্রন্থে বর্ণিত আছে ইমাম ইবন হিব্বান এর সহীহ “ইবন হিব্বান”-এর হাদীস নাম্বার ১৯৮০, পৃষ্ঠা-৩৫৫, খ--১৩। আহলে হাদীস তথা লা-মাযহাবীদের নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি নাসির উদ্দিন আলবানীর সিলসিলাতুল আহাদিস আসসাহীতা-এর ৩য় ভ- ১৩৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১১৪৪। ইমাম তাবারানী তার বিখ্যাত কিতাব “মুজামুল কাবীর”-এর ১৫ খ-, ২২১ পৃষ্ঠা। ইমাম বায়হাকী “শুয়াবুল ঈমান”-এর হাদীস নং ৩৮৩৩। “ফাজায়েলুল আওকাত”-এর হাদীস নং-২২, পৃষ্ঠা-১১৯। আত তারগীব ওয়াত তারহীব” এর ২য় খ- ২৪১ পৃষ্ঠা। “মাজমাউয যাওয়ায়েদ” এর ৮ম খ- ৬৫ পৃষ্ঠা। “আল হিলয়াহ” এর ৫ম খ-, পৃ-১৯১। “আসসুন্নাহ” এর হাদীস নং-৫১২।
উল্লেখ্য, বায়হাকী শরীফে বর্ণিত হাদীসটি অন্যান্য ওলামায়ে-কেরাম ছাড়াও শবে-বরাতের বিরুদ্ধবাদী আলেমগণও সহীহ হাদীস হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন