Powered By Blogger

রবিবার, ২৩ জুন, ২০১৩

আজ পবিত্র শবে-বরাত



এম. বোরহান উদ্দিন রতন : 

আজ সোমবার দিবাগত রাত পবিত্র শবে-বরাত, পবিত্র কুরআন হাদীসের অসংখ্য বর্ণনা অনুযায়ী মর্যাদাময় রাত। পবিত্র শবে-বরাত যে মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ রাত এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। সকল অতীত ও বর্তমান মুফাসসিরীন এ মুহাদ্দিসীনে কেরাম এ রাতকে এক বাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন। কারণ পবিত্র এ রাতের অস্তিত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব পবিত্র কুরআন হাদীস দ্বারা বহুল প্রমাণিত। শবে-বরাতের রাতে মানুষের বার্ষিক ভাগ্যলিপি লিখা হয় এবং বিগত বছরের আমল নামা আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। এক বৎসরের হায়াত-মউত-রিজিক, দৌলত-তথাভাগ্য নির্ধারণ হয়। এই রাতে আল্লাহরপাক বান্দার দিকে বিশেষ রহমতের নজরে তাকান। এই রাত্রিতে ৭০ হাজার ফিরিস্তা নিয়ে জিবরাঈল দুনিয়াতে আসেন এবং রহমত বন্টন করেন। আরবের বনী কালব গোত্রের ৩০ হাজার বকরীর পশমের সংখ্যারও অধিক গুনাহগারকে ক্ষমা করা হয় এ রাত্রে। এ রাত্রিতে কবিরা গুনাহ ব্যতীত অন্যান্য গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং তওবা করলে কবিরা গুনাহগারকেও ক্ষমা করা হয়।
ফলে এ রাতে নফল নামাজ, তিলাওয়াত, যিকির আযকার, দান-খয়রাত, কবর যিয়ারত করা উত্তম। এই রাত্রে আগামী এক বছরের যাবতীয় বিষয়াদি নির্ধারিত হয় এবং শবে ক্বদরের সংশ্লিষ্ট ফিরিস্তার কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই রাত্রে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শাফাআতের পূর্ণ অধিকার প্রদান করা হয়েছে।
ইসলামের ইতিহাসে পবিত্র এ রাতটি বিশ্বের অন্যান্য মুসলমানদের ন্যায় বাংলাদেশের মুসলমানরাও যথাযোগ্য মর্যাদায় রাত ভর এবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে পালন করবে। শবে বরাতের এ পবিত্র রাতে এবদত বন্দেগীর অন্তর্ভুক্ত থাকবে কোরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ, ওয়াজ, জিকির আসকার, কবর জিয়াতর এবং মিলাদ দোয়া ও মোনাজাত।
কিছু ভ্রান্ত মতবাদীরা মিডিয়ায় তাদের বক্তব্য আলোচনা ও লেখনীতে সর্বদা বলে বেড়াচ্ছে যে লাইলাতুল বরাতের বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোন দলিল পবিত্র কুরআন বা হাদীস শরীফে নেই। যা আছে তা মওজু বা জাল।
অথচ কুরআনুল কারীম নির্ভরযোগ্য তাফসীরের ভাষ্য হচ্ছে- তাফসিরে বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইকরামা (রা.) হতে তাফসীরে তাবারী শরীফের ১০ম খ-ের ২২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত মধ্য শাবানের রাতে বছরের জন্য সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। জীবিত ও মৃতদের তালিকাও তৈরী করা হয়। এ তালিকা থেকে একজনও কমবেশী হয় না।
ইবনুল মুনজির (রা) ও ইবনু আবি হাতেম (রা:) তাফসীরে রুহুল মায়ানীতে একই বর্ণনা করেছেন। একইভাবে বিশিষ্ট ৬৫টি তাফসীরে গ্রন্থে শবে-কদর এবং ১৪ শাবানের দিবাগত রাত শবে-বরাতের কথা গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে।
হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী (রহ.) তদ্বীয় কিতাব মুকাশশাফাতুল কুলুব এর ৬৪০ পৃষ্ঠায় ইমাম সুবকীর বরাতে উল্লেখ করেন শবে বরাতের রাতে (এবাদত) সারা বছরের গুনাহ মাফের জন্য বদলা হয়। একইভাবে শবে কদরের রাতের এবদত জিন্দেগীর গুনাহ মাফের বদলা হয়। আর সপ্তাহের গুনাহ মাফের বদলা বা উছিলা হয় প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতের (শুক্রবারের রাত) এবদত বন্দেগী।
হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মধ্য শাবানের রাতে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে জালওয়া রাখেন, অত:পর তাঁর সকল বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক বা শত্রুতা পোষণকারী ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না। এছাড়াও হাদীসটি যে সব গ্রন্থে বর্ণিত আছে ইমাম ইবন হিব্বান এর সহীহ “ইবন হিব্বান”-এর হাদীস নাম্বার ১৯৮০, পৃষ্ঠা-৩৫৫, খ--১৩। আহলে হাদীস তথা লা-মাযহাবীদের নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি নাসির উদ্দিন আলবানীর সিলসিলাতুল আহাদিস আসসাহীতা-এর ৩য় ভ- ১৩৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১১৪৪। ইমাম তাবারানী তার বিখ্যাত কিতাব “মুজামুল কাবীর”-এর ১৫ খ-, ২২১ পৃষ্ঠা। ইমাম বায়হাকী “শুয়াবুল ঈমান”-এর হাদীস নং ৩৮৩৩। “ফাজায়েলুল আওকাত”-এর হাদীস নং-২২, পৃষ্ঠা-১১৯। আত তারগীব ওয়াত তারহীব” এর ২য় খ- ২৪১ পৃষ্ঠা। “মাজমাউয যাওয়ায়েদ” এর ৮ম খ- ৬৫ পৃষ্ঠা। “আল হিলয়াহ” এর ৫ম খ-, পৃ-১৯১। “আসসুন্নাহ” এর হাদীস নং-৫১২।
উল্লেখ্য, বায়হাকী শরীফে বর্ণিত হাদীসটি অন্যান্য ওলামায়ে-কেরাম ছাড়াও শবে-বরাতের বিরুদ্ধবাদী আলেমগণও সহীহ হাদীস হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

শনিবার, ৮ জুন, ২০১৩

মাহে রমাদানের গুরুত্ব ও ফযীলত



এম. বোরহান উদ্দিন রতন

আহালান সাহালান মাহে রামাদান, বছর ঘুরে মহান রব্বুল ‘আলামীনের রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের শুবার্তা  নিয়ে হাজির হচ্ছে মাহে রমাদান। সমস্যাবিুব্ধ মানবতা আজ যে সকল সমস্যার সমাধান খুঁজে হয়রান, তারই নির্ভুল ও শান্তিপূর্ণ সমাধান দিয়ে মহান আল্লাহ তাঁর শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাঠিয়েছেন এই মাহে রমাদানে। আর আল-কুরআনই হচ্ছে দুনিয়ার মানুষের জন্য একমাত্র নিখুঁত ও নির্ভুল পথ-নির্দেশ। মানবতার স্থায়ী পথ-নির্দেশকরূপে আল-কুরআনকে মাহে রমাদানে নাযিল করে মহান আল্লাহ এ মাসকে করেছেন মহিমান্বিত। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ নিজেই ঘোষণা করে বলেছেন, “রমাদান এমন এক মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে-যা সমগ্র মানবজাতির জন্যে হেদায়েতস্বরূপ, যা সত্য পথ প্রদর্শণকারী সুস্পষ্ট শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট এবং হক ও বাতিলের সুষ্পষ্ট পার্থক্যকারী”। (সূরা বাকারা : ১৮৫)। পবিত্র রমাদান মাসের মহত্ত্ব ও ফযীলত আলোচিত হয়েছে তিনটি কারণে : (১) পবিত্র কুরআন এ মাসেই নাযিল হয়েছে, (২) এ মাসেই এমন এক রাত আছে যা কল্যাণ, মঙ্গল, ও বরকতের দিক দিয়ে এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম, (৩) আর এ মাসেই মুসলমানদের প্রতি আল্লাহর ইবাদতস্বরূপ রোযা রাখা ফরয করা হয়েছে। এ সকল কারণে নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমাদান মাসকে “সাহ্রুল্লাহ” বা আল্লাহর মাস বলে আায়িত করেছেন এবং এ মাসকে সকল মাসের সেরা মাস বলে উল্লেখ করেছেন।
রমাদান শব্দের বিশ্লেষণে দেখা যায়, “রমদ” শব্দের আভিধানিক অর্থ দগ্ধ করা, জালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করা। শরী‘য়তের ভাষায় এ মাসেই রোযার মাধ্যমে রোযাদারের গুণাহগুলো জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যায় এবং মু‘মিনের জীবন পাপমুক্ত হয়ে পবিত্র হয়ে যায়।
রমাদান মাসের মাহাত্ম্য : পবিত্র রমাদান মাসেই পবিত্র কুরআন নাযিলের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ তথা ইসলামী সভ্যতার জাগরণ ও উত্থান শুরু হয়। এ জাগরণ ও উত্থান নৈতিক ও আধ্যাত্মিক, এ জাগরণ সাংস্কৃতিক ও   রাজনৈতিক, এ জাগরণ ব্যক্তিগত ও সামাজিক। তাই কুরআনী-শাসন ব্যবস্থাই দুনিয়াবাসীকে একদিন জান্নাতি শান্তি দুনিয়ায় এনে দিয়েছিল।
পবিত্র মাহে রমাদানের গুরুত্ব ও ফযীলত তাই অসীম। আমরা এখানে তার কিছু বিষয় আলোচনা করবো।
এ মাসে পবিত্র কুরআন নাযিল হয়েছে যা মানব জাতির জন্য একমাত্র পরিপূর্ণ কল্যাণকর ও শান্তিপূর্ণ পথ নির্দেশ। আল্লাহর ঘোষণা হলো “রমাদান মাস, ইহাতে কুরআন নাযিল হয়েছে, যা গোটা মানব জাতির জন্য জীবন যাপনের বিধান এবং তা এমন সুস্পষ্ট উপদেশাবলীতে পরিপূর্ণ যা সঠিক ও সৎ-পথ প্রদর্শন করে এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য পরিষ্কাররূপে তুলে ধরে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসটি পাবে সে যেন রোযা রাখে “সূরা বাকারা : ১৮৫)। সুতরাং পবিত্র কুরআন সকল মানুষের জন্য শান্তিপূর্ণ পথনির্দেশ দুনিয়ার অন্য কোনো গ্রন্থ বা মতবাদ দুনিয়ার সকল মানবজাতির কল্যাণের জন্য উপযুক্ত বলে দাবি করেনি। আর পবিত্র কুরআন হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী অর্থাৎ মানুষের হাজার কাজের মধ্যে কোনটি সত্য ও কোনটি মিথ্যা, কোনটি কল্যাণকর আর কোনটি অকল্যাণকর তা একমাত্র সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর অসীম জ্ঞানের বিষয়, আর তা বর্ণনা করা হয়েছে এই কুরআনের মাধ্যমে।
নফল পবিত্র মাহে রমাদান গুণাহ মাফ পাওয়ার একটি সুনিশ্চিত সময় ও সুযোগ দান করে। হযরত কা‘ব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা মিম্বরে উঠার সময় তিনি শিড়িতে তিনবার আমিন বললেন। সাহাবীগণ এর কারণ জানতে চাইলে উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “আমি যখন প্রথম শিড়িতে পা দিলাম তখন জিবরাঈল (আ.) বললেন, “ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি যে, রমাদানের রোযা পেল কিন্তু সে রোযা রেখে জীবনে গুণাহসমূহ মাফ করাতে পারেনি। আমি বললাম, আমীন। অতঃপর জিবরাঈল (আ.) বললেন, ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি যে, আমার নাম শুনলো অথচ “ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম” পড়লো না। “আমি বললাম, আমীন। অতঃপর জিবরাঈল (আ.) বললেন, “ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি যে, বৃদ্ধ অবস্থায় তার মা-বাবাকে জীবিত পেলো, অথচ মা-বাবার সেবা করে জান্নাতের ব্যবস্থা করে নিলো না”। আমি বললাম, আমীন (সহীহ আল-বুখারী)। অতএব, রমাদান মাস গুণাহ মাফ করে চির মুক্তিলাভের একটি নিশ্চিত সুযোগ লাভের সময়।
পবিত্র মাহেরমাদান মু’মিনকে আল্লাহ ভীতি বা তাক্ওয়া অর্জনের প্রশিণদান করে :
মহান আল্লাহর ঘোষণা হলো ঃ “হে মু’মিনগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেমনি ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাক্ওয়া অর্জন করতে সম হও” (সূরা বাকারা : ১৮৩)। আর সমগ্র মানব জাতির পথ প্রদর্শনের জন্য পবিত্র কুরআন নাযিল করা হলেও এর থেকে পথ নির্দেশনা লাভ করতে পারে শুধুমাত্র যারা ‘তাক্ওয়া’বান বা আল্লাহভীতির বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। মহান আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে “ইহা এমন একখানা গ্রন্থ, যা মানবতার মুক্তি সনদ হিসেবে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই, ইহা মুত্তাক্বীগণের জন্য পথ নির্দেশ বা হেদায়েত ......... (সূরা বাকারা : ২)। মানুষ যখন এই বিশ্বাসের অনুসারী হবে যে, তার জীবনের প্রতিটি কথা ও কাজের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে তাকে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে, এ ভয় অন্তরে রেখে আল্লাহর আদেশগুলো সঠিকভাবে পালন করে ও আল্লাহর নিষেধগুলো বর্জন করে চলেন, তখন দুনিয়ায় কোনো প্রকার অন্যায়, অত্যাচার, অরাজকতা ও যুলুম-নিপীড়ন চল্তে পারে না। তার যাবতীয় কাজে একথাই চিন্তা করবে যে, দুনিয়ার মানুষকে ফাঁকি দিয়ে অনেক অন্যায় কাজ করা সম্ভব, কিন্তু চিরদ্রষ্টা, চিরঞ্জীব আল্লাহ তা‘আলাকে ফাঁকি দিয়ে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ চিরঞ্জীব, তিনি ঘুমান না, তন্দ্রা তাকে স্পর্শ করতে পারে না। তিনি সকল কিছু জানেন, শোনেন, এমনকি মানুষ অন্তরে কি চিন্তা-ভাবনা, জল্পনা-কল্পনা করে, কাউকে চোখের ইশারায় কি বুঝায় তাও তিনি অবগত আছেন। মানুষ কোন নিয়তে কি করছে তাও তার নিকট জ্ঞাত। এই বিশ্বাস ও জ্ঞানে সমৃদ্ধিদান করে পবিত্র রমাদান মাসের রোযা। ফলে রোযাদার দীর্ঘ একমাসের তাক্ওয়া অর্জনের প্রশিণ কোর্সের মাধ্যমে নিজেকে একজন সৎ ও কল্যাণকামী মানুষ, ন্যায় প্রতিষ্ঠাকারী ও অন্যায় উৎখাতকারী হিসেবে সমাজে পরিচিতি লাভ করে। ফলে তার দ্বারা ইহকালীন শান্তি ও পারলৌকিক মুক্তির কাজই হতে থাকে।
মাহে রমাদান জান্নাত লাভের একটি মাধ্যম : রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনলো, সালাত কায়েম করলো, যাকাত আদায় করলো, রমাদান মাসের সিয়াম বা রোযা পালন করলো, তার জন্য আল্লাহর উপর সে বান্দার অধিকার হলো, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেয়া” (সহীহ আল-বুখারী)।
মাহে রমাদানে নেক কাজের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয় : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যখন রমাদান মাস আসে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, আর জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদের আবদ্ধ করা হয়,” (সহীহ মুসলিম)।
মাহে রমাদানে অল্প ইবাদতে বেশি সওয়াব পাওয়া যায় : মাহে রমাদান মাসেই কদরের রাত। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রমাদানের শেষ দশ দিন শুরু হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কদরের রাতের সওয়াব হাসিল করার জন্য পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিতেন। রাত জাগ্তেন এবং নিজের পরিবারকেও জাগাতেন” (সহীহ আল-বুখারী ও মুসলিম)।
কদরের রাতের ইবাদত অপরাপর একহাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও বেশি সওয়াব হাসিল হয় বলে মহান আল্লাহ তা‘আলা নিজেই ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, “কদরের একরাতের ইবাদত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম, এ রাতে ফিরেশতা এবং “রূহ” (জিবরাঈল আ.) তাদের রবের অনুমতিক্রমে প্রত্যেক (কল্যাণকর) কাজের জন্য দুনিয়ায় অবর্তীণ হয়। (এ রাতে বিরাজ করে) শান্তি আর কল্যাণকর (পরিবেশ)-তা ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত থাকে” (সূরা ক্বদর : ৪-৫)।
পবিত্র রমাদানে ‘উমরাহ আদায় করলে (নফল) হজ্জ আদায়ের সওয়াব পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “রমাদান মাসে উমরাহ আদায় করা আমার সাথে হজ্জ আদায়ের সমতুল্য সওয়াব” (সহীহ আল-বুখারী)। অর্থাৎ যে মু’মিন ব্যক্তির উপর হজ্জ আদায় করা ফরয তিনি তার ফরয হজ্জ আদায়ের পরে যত খুশী নফল হজ্জ ও ‘উমরাহ আদায় করতে পারেন’। আর রমাদানে উক্ত ‘উমরাহ আদায়ের সওয়াব নফল হজ্জের তুল্য সওয়াব পাওয়া যায়।
মাহে রমাদান মু’মিন বান্দার জন্য সার্বিক কল্যাণকর কাজে উপকারী প্রমাণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ তা’আলার ঘোষণা হলো, “যদি তোমরা উপলব্ধি করতে পারতে তবে বুঝতে যে, (রমাদানের) রোযা পালন করা তোমাদের (সম-মা‘জুরদের) জন্যও অধিক কল্যাণকর” (সূরা বাকারা : ১৮৪)।
(ক) নৈতিক কল্যাণ সাধনে রমাদানের রোযা উপকারী : বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমাণ দ্বারাও প্রমাণিত যে, রমাদানের রোযা মু’মিনদের সার্বিক কল্যাণ সাধনের জন্যই মহান আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীন দান করেছেন। সিয়াম সাধনায় শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক কল্যাণ অর্জিত হয়। দীর্ঘ একমাস যাবত প্রত্যাহিক নিয়মে একই অনুশীলনের মাধ্যমে চেতনা সম্পন্ন রোযাদারই তার অর্জিত কল্যাণগুলো অনুধাবন করতে পারেন। এেেত্রও আল্লাহভীতি অর্জনের ল্েয প্রকৃত রোযাদারগণই ভালো ফল লাভ করে থাকেন। এটা প্রমাণিত সত্য যে, রোযা বান্দাকে হিংসা, বিদ্বেষ, গর্ব-অহংকার, তথা অহমিকাবোধ দমন করে, ক্রোধ, মানসিক উত্তেজনা, অনিয়ন্ত্রিত আবেগ ও অ-শোভনীয় ক্রিয়া-কর্ম বহুলাংশে কমিয়ে দেয়। সাথে সাথে সার্বণিক মহান মাওলার হাযীর ও নাযির থাকার অনুভূতির সক্রিয়তার কারণে জেনে শুনে তার দ্বারা কোনো প্রকার অন্যায় ও অনৈতিক কাজ সংঘটিত হতে পারে না।
(খ) স্বাস্থ্যগত কল্যাণ সাধনেও রমাদানের রোযা উপকারী : পবিত্র রমাদানের সিয়াম সাধনায় মানুষের শরীরে স্বাস্থ্যগত কোনো তি তো হয়ই না বরং চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরীা-নিরীায় প্রমাণিত হয়েছে যে স্বাস্থ্যগত কল্যাণ সাধনেও রমাদানের রোযা উপকারী। রোযার অর্থ-অনাহার বা উপোস করাই নয় বরং প্রতি বছর ১ মাসের জন্য খাদ্য গ্রহণের সময়সূচি পরিবর্তন করা। এ মাসে সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত পানাহার করা যায়। সুব্হি ছাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়। এতে স্বাস্থ্যহানী কিংবা পুষ্টির অভাবজনিত সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনাই নেই। উপরন্তু এতে রয়েছে বিশেষ শারীরিক ও স্বাস্থ্যগত নানাবিধ কল্যাণ।
আধুনিক কালের বিজ্ঞানীগণ পর্যবেণ থেকে দেখেছেন যে, রোযা পালনের ফলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন হ্রাস পায় এবং বিপাকক্রিয়া শক্তিশালী হয়। যা ডায়াবেটিস রোগ থেকে আত্মরার সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করে তোলে। ডায়াবেটিস মারাত্মক বিপাক-যাকে (গবঃধনড়ষরংস)  জনিত রোগ বলা হয়। মানবদেহের ‘প্যানক্রিয়াস’ বা ‘অগ্ন্যাশয়’ গ্রন্থি (চধহপৎবধং মষধহফ) থেকে ইনসুলিন নামের এক প্রকার হরমোন নিঃসৃত হয়। এ ইনসুলিন গ্লকোজকে ভেঙে শরীরে বিভিন্ন কাজে লাগায়। কিন্তু প্যানক্রিয়াসগ্লান্ড থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত না হলে কিংবা বন্ধ হয়ে গেলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর নাম হলো ‘ডায়াবেটিস’। করুণাময় আল্লাহ বছরে একমাস রোযার বিধানকে বিধিবদ্ধ করেছেন এজন্য যে, এতে করে বিপাক ক্রিয়া সক্রিয় থাকে এবং প্যানক্রিয়াস গ্রন্থি থেকে ইনসুলিন নিঃসরণের বিপত্তি ঘটে না। আর কেবলমাত্র মু’মিনগণ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের ল্েয রোযা পালন করতে গিয়ে এরূপ স্বাস্থ্যগত শারীরিক কল্যাণও লাভ করে থাকেন।
এখনতো প্রায়ই দেখা যায় মানুষ হঠাৎ হার্টফেল করে। হার্টের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড নির্বিঘেœ চলে করোনারী ধমোনীর মধ্য দিয়ে নির্বিঘেœ রক্ত প্রবাহিত হলে। করোনারী ধমনীর অনেক শাখা-প্রশাখা হৃদপিণ্ডের পেশীর ভেতরে বিস্তারলাভ করে এবং কোষসমূহের স্বাভাবিক কাজকর্ম ঠিক রাখে। কিন্তু হার্টের কাজকর্মে বিপত্তি ঘটে তখন, যখন করোনারী ধমনীতে জমে যায় টুকরো টুকরো চর্বি। ফলে রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। আর একারণেই হঠাৎ হার্টফেল করে। কেউ কেউ মারাও যায়। কিন্তু বছরে একমাস রোযা পালন করার ফলে অধিকাংশ েেত্রই করোনারী ধমনী চর্বিমুক্ত থাকে। বিভিন্ন বিজ্ঞান ম্যাগাজিন থেকে জানা যাচ্ছে যে, চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মুসলিম দেশের রোযা পালন কারীদের উপর জরিপ পরিচালনা করে বিস্ময়কর এ তথ্য প্রকাশ করেছেন।
গ্যাসট্রিক রোগীদের উপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, রোযা পালনের কারণে, তাদের ধারণা মতে রোগ তো বৃদ্ধি পায়ই না বরং দীর্ঘ একমাস রোযা পালন করলে অস্বাভাবিক গ্যাসট্রিক এসিডিটি স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসে এবং পেপটিক আলসার থেকে রোগী পর্যায়ক্রমে পরিত্রাণ লাভ করে। একটি বৈজ্ঞানিক গবেষনার  প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছেন যে, রমাদান মাসে দীর্ঘ এক মাস যাবত রোযা রাখার ফলে গ্যাসট্রিক অম্লতা কমে যায় এবং  অম্লতা স্বাভাবিক অবস্থায় পরিবর্তিত হয়। তারা মিসরীয় গ্রামবাসীদের ও উত্তর নাইজেরিয়ার অধিবাসীদের এবং জাভা ও মালয়ী মুসলমানদের উপর জরিপ চালিয়ে প্রতিবেদনে দেখিয়েছেন যে, বছরে একমাস রোযা পালনের কারণেই তাদের ঐ রোগ নেই। এরা সিয়াম পালন করে বলেই এদের মধ্যে পেপটিক আলসার রোগের আক্রমণ নেই বললেই চলে।
আমেরিকার বিখ্যাত চিকিৎসাবিদ Ut. Ubabiu ". এ বিষয়ে গবেষণার রিপোর্ট পেশ করে বলেছেন :
"Nadhasaba hyaba bhararapha dhadhiu bhatrasa mhrasadhapaya dhahapha hyabaha uram yadhaba nabamamha hra mhdhataba harah hyaba nrapasa sadhaha namh pharambadhamba hyaba. Nayaba pharamabamhraba ratmadhaham dhatba marabaha nrasaba tbamh hra ritsa rihya tbapharamnasabapha bahabatmu dhahapha aramaramt lah dham he yirapaya sadhahapha dhim sababhah rihyaramh pamsahradhahraraha bharat rahaba ubadhat bharasasararihama rat lah dham he padhaha sadhaha ritsa rihya tbapharamnasabapha aramaramt dhabhahbat nrasaba tbamh ".
এ সকল তথ্য থেকে এ সত্যই প্রমাণিত হয় যে, রোযা পালন করার দরুণ গ্যাসট্রিক এসিডিটি অনেকাংশে হ্রাস পায় এবং রোগী পেপটিক আলসার থেকে রা পায়। অর্থাৎ গ্যাসট্রিকের বিরুদ্ধে রোযা ঢালের মত কাজ করে। পাকস্থলী বিশ্রাম পায় বিধায় পরিপাকে সক্রিয় অঙ্গগুলো দ্বিগুণ শক্তিলাভ করে যা পরবর্তী কার্য সম্পাদনে শক্তি যোগায়। এখানেও দেখা যাচ্ছে রোযা ঢালস্বরূপ।
সুতরাং আসুন, আমরা পবিত্র রমাদান মাসের সীয়াম সাধনার মাধ্যমে মহান আল্লাহর ‘তাক্ওয়া’ হাসিল করে খালেছভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষে   পরিশুদ্ধ ইসলামী জীবন ও সমাজ গড়ে তুলি। আল্লাহ আমাদের পবিত্র রমাদানের রোযার মাধ্যমে নৈতিক ও শারীরিক উন্নতি লাভের তৌফিক দিন, আমিন।
লেখক : এম বোরহান উদ্দিন রতন
 Email : borhanuddin@engineer.com
 Hotline : 01822498218